মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা

মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা নিয়ে এই আর্টিকেলে আপনাকে শিখাবো কিভাবে পুকুরের উপরের, মধ্যবর্তী ও নিম্নবর্তী স্তরে মাছের প্রজাতি নির্বাচন করবেন, কি কি ভৌত-রাসায়নিক গুনাগুন মাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদনে প্রভাবিত করে এবং কিভাবে পানির গুণগত মান ধরে রাখতে হয়। মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা।
মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই আর্টিকেলে সব তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি পড়বেন কোন অংশ মিস করবেন না।

ভূমিকা:

মাছ চাষ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি শাখা, যা দেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বড় ভূমিকা রাখে। মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি, পানির বিভিন্ন স্তর, মাছের প্রজাতি নির্বাচন, খাদ্য ও পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয় সঠিকভাবে বুঝা ও পালন করা খুবই জরুরি। এই লেখার মাধ্যমে আমরা কিছু লাভজনক মাছের প্রজাতি ও তাদের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা।

 পানির স্তর বলতে পুকুরের জলের উপরে, মাঝে ও নিচের অংশকে বুঝায়। পানির স্তর অনুযায়ী মাছের প্রজাতি ও খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। পানির উপরের স্তরে অধিক আলো, অক্সিজেন ও খাবার থাকে। এই স্তরে রুই, কাতলা, মৃগেল, কই, পুঁটি ইত্যাদি মাছ থাকে। পানির মধ্যম স্তরে মাঝারি আলো, অক্সিজেন ও খাবার থাকে।

এই স্তরে তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, কমলা, বাটা ইত্যাদি মাছ থাকে। পানির নিচের স্তরে কম আলো, অক্সিজেন ও খাবার থাকে। এই স্তরে পাঙ্গাস, শিঙ, মাগুর, কচকি, শোল ইত্যাদি মাছ থাকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আরো জানব।

মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি।কোন মাছ চাষে লাভ বেশি।তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন।মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয়।পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি। বুঝতে পারছনা আর্টিকেলটি কেমন হতে যাচ্ছে পুরো আর্টিকেলটি পূরণ।

মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যাএই আর্টিকেলে এখন আমরা আলোচনা করব মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা নিয়ে। বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই আর্টিকেলে চলুন তাহলে শুরু করা যাক।মাছ চাষের জন্য পানির গুণাগুণ এবং উৎপাদনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির ভিতরে মাছের জীবন ধারণ ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।

বিভিন্ন উপাদান যেমন অক্সিজেন, ফসফরাস, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, শৈবাল, প্লাঙ্কটন ইত্যাদি থাকে। এই উপাদানগুলির মাত্রা ও বিতরণ পানির বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন হয়। পানির স্তর মোটকথা তিনটি হয়- উপরের স্তর, মধ্যম স্তর এবং নিচের স্তর। এই স্তরগুলির বৈশিষ্ট্য এবং মাছ চাষের কৌশল নিম্নরূপ:উপরের স্তর এটি পানির সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ স্তর।

এই স্তরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে এবং শৈবাল ও প্লাঙ্কটনের ফোটোসিনথেসিস ঘটে। এই স্তরে অক্সিজেন উৎপাদন হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করা হয়। এই স্তরের পানির পিএইচ স্তর সাধারণত ৬.৫ থেকে ৮.০ এর মধ্যে থাকে। এই স্তরে বাতাসের সংস্পর্শে থাকা মাছ বেশি থাকে। যেমন কাতলা, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া, সরপুঁটি ইত্যাদি।

 এই স্তরের মাছ বেশি খাদ্য গ্রহণ করে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়।মধ্যম স্তর: এটি পানির মধ্যবর্তী স্তর যেখানে আলো ও অক্সিজেনের পরিমাণ কম হয়। এই স্তরে শৈবাল ও প্লাঙ্কটনের ফোটোসিনথেসিস কম হয় এবং অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন হয়। এই স্তরের পানির পিএইচ স্তর সাধারণত ৬.০ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকে। 

এই স্তরে মধ্যবর্তী স্তরের মাছ বেশি থাকে। যেমন রুই, তেলাপিয়া, সরপুঁটি, কার্পিও ইত্যাদি। এই স্তরের মাছ মধ্যম খাদ্য গ্রহণ করে এবং মধ্যম বৃদ্ধি পায়।নিচের স্তর: এটি পানির সবচেয়ে অন্ধকার এবং অক্সিজেন দরিদ্র স্তর। এই স্তরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না এবং শৈবাল ও প্লাঙ্কটনের ফোটোসিনথেসিস ঘটে না। 

এই স্তরে অক্সিজেন গ্রহণ হয় না বরং কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন হয়। এই স্তরের পানির পিএইচ স্তর সাধারণত ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকে। এই স্তরে নিচের স্তরের মাছ বেশি থাকে। যেমন মৃগেল, মিররকার্প, কালো বাউশ ইত্যাদি।

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

আমরা এই আর্টিকেলের প্রথমেই আলোচনা করেছি। মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা নিয়ে। ইতিমধ্যেই আমরা আলোচনা করেছি এখন আলোচনা করব মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি নিয়ে।মাছ চাষ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ও আয় উৎস। মাছ চাষের মাধ্যমে প্রচুর প্রাণিজ আমিষ প্রস্তুত করা যায়, যা মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। 

মাছ চাষের জন্য পুকুর হলো সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ জলাশয়। পুকুরে বিভিন্ন ধরণের মাছ চাষ করা যায়, যেমন কার্প, তেলাপিয়া, শিং, মাগুর, কই, পুঁটি ইত্যাদি। পুকুরে মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুকুর প্রস্তুতি করা হলো পুকুরের পাড়, তলা, পানি ও জৈব বিন্যাস উন্নত করে মাছ চাষের জন্য উপযোগী করা। 

পুকুর প্রস্তুতির মাধ্যমে পুকুরের পানির গুণাগুণ উন্নত করা যায়, পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়ায়, মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। পুকুর প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

পুকুর নির্বাচন

  • মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন হলো প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পুকুর নির্বাচনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
  • পুকুরটি লোকালয় বা বাড়ির কাছাকাছি হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়।
  • সাধারণত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য উত্তম।
  • যে কোনো আয়তনের পুকুরে মাছ চাষ করা যায়। তবে ৩০ শতাংশ থেকে ১ একর আকারের পুকুর বেশি উপযোগী।
  • পুকুরের পাড় এমন উঁচু হতে হবে যাতে বন্যায় প্লাবিত না হয়।
  • পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার হলে ভালো।
  • পুকুর পাড়ের ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। ছায়া সৃষ্টিকারী কোনো গাছ থাকলে কেটে ফেলতে হবে।
  • পুকুর প্রস্তুতকরণ
পুকুর নির্বাচনের পর পুকুর প্রস্তুতকরণের কাজ শুরু করতে হবে। পুকুর প্রস্তুতকরণের কাজ নিম্নলিখিত পর্যায়ক্রমে করতে হবে- পুকুরের পাড় ও তলা মেরামত করা। পুকুরের পাড় ও তলা যদি ভাঙা, ফাটা, কুঁড়া বা গর্ত থাকে তাহলে সেগুলো মেরামত করতে হবে। পুকুরের পাড় ও তলা যদি বালি বা কাঠের কাঁচা মাটি দিয়ে মেরামত করা হয় তাহলে ভালো হয়।

পুকুরের পানি ফাঁকা করা। পুকুরের পানি ফাঁকা করে পুকুরের তলা শুকিয়ে দিতে হবে। পুকুরের তলা শুকিয়ে দিলে পুকুরের তলায় থাকা কীটনাশক, কীটপতঙ্গ, কীটাণু ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জীব মারা যায়। এছাড়াও পুকুরের তলায় থাকা অবাঞ্ছিত জৈব ও অজৈব পদার্থ শুকিয়ে পুকুর থেকে বাহিরে নিয়ে যাওয়া যায়।

পুকুরের তলা খনন করা। পুকুরের তলা খনন করে পুকুরের তলায় থাকা কালো মাটি, কাদা, কাঠ, পাথর, বালি, প্লাস্টিক ইত্যাদি পুকুর থেকে বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুকুরের তলা খনন করে পুকুরের তলা সমতল করা হয়। পুকুরের তলা সমতল হলে পুকুরের পানির গভীরতা সমান থাকে এবং পুকুরের পানির সঞ্চালন ভালো হয়।

পুকুরের পাড় ও তলা পরিষ্কার করা। পুকুরের পাড় ও তলা পরিষ্কার করে পুকুরের পাড় ও তলায় থাকা কোনো অবাঞ্ছিত জীব বা পদার্থ পুকুর থেকে বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুকুরের পাড় ও তলা পরিষ্কার করে পুকুরের পানির গুণাগুণ উন্নত করা যায়।

পুকুরের পাড় ও তলা চুন দেওয়া। পুকুরের পাড় ও তলা চুন দেওয়া হলো পুকুরের পানির পিএইচ বা অম্লতা কমানোর একটি পদ্ধতি। পুকুরের পানির পিএইচ যদি ৬.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে থাকে তাহলে পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী হয়। পুকুরের পানির পিএইচ যদি এই সীমার বাইরে থাকে তাহলে পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য অনুপযোগী হয়।

পুকুরের পানির পিএইচ যদি কম হয় তাহলে পুকুরের পানি অম্লীয় হয় এবং যদি বেশি হয় তাহলে পুকুরের পানি শারীয় হয়। পুকুরের পানির পিএইচ যদি অম্লীয় হয় তাহলে পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায়, মাছের রোগ বাড়ে, মাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং মাছের মৃত্যু হতে পারে। পুকু

কোন মাছ চাষে লাভ বেশি জেনে নিন

আমরা প্রথম থেকেই মাছ চাষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আসছি। ইতিমধ্যেই আমরা আলোচনা করেছি মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা নিয়ে। এখন আমরা আলোচনা করব কোন মাছ চাষে লাভ বেশি হয়।বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মাছ বাণিজ্যিক ভাবে পুকুরে চাষাবাদ করা হয়।

 মাছ চাষের পদ্ধতি, পুকুরের সাইজ, পানির পিএইচ ও খামারির দক্ষতার উপর নির্ভর করে কোন মাছের চাষে লাভ বেশি হবে তা ঠিক করা যায়। কিন্তু কিছু মাছের প্রজাতি আছে যেগুলো কম খরচে বেশি লাভ দেয়। এমন ৫টি মাছের প্রজাতি নিচে উল্লেখ করা হলো।

চিংড়ি: চিংড়ি মাছ চাষের জন্য একটি লাভজনক প্রজাতি। চিংড়ি মাছ বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয় এবং চাহিদা ও বেশি। চিংড়ি মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানির পিএইচ এবং অক্সিজেন এর মাত্রা ভালো রাখতে হবে। চিংড়ি মাছ চাষের জন্য বাগদা ও গলদা চিংড়ি সবচেয়ে উপযুক্ত।

সিলভার কার্প: সিলভার কার্প মাছ বাংলাদেশে চাষের জন্য একটি লাভজনক প্রজাতি কারণ এটির উচ্চ মূল্য এবং বাজারে চাহিদা রয়েছে। সিলভার কার্প একটি শক্ত মাছের প্রজাতি, উষ্ণ, অগভীর জলে বেঁচে থাকতে এবং প্রজনন করতে সক্ষম, যা বাংলাদেশের জলবায়ুতে চাষ করা সহজ করে তোলে।

তেলাপিয়া:তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য একটি জনপ্রিয় প্রজাতি। তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য কম পানি এবং কম খাদ্য চাহিদা হয়। তেলাপিয়া মাছ বাজারে মধ্যম মূল্যে বিক্রি হয় এবং চাহিদা ও বেশি। তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য নীলা ও রেড তেলাপিয়া সবচেয়ে ভালো।

কই: কই মাছ চাষের জন্য একটি লাভজনক প্রজাতি। কই মাছ বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয় এবং চাহিদা ও বেশি। কই মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানির পিএইচ এবং অক্সিজেন এর মাত্রা ভালো রাখতে হবে। কই মাছ চাষের জন্য রুপচন্দা ও কালিবৌস কই সবচেয়ে উপযুক্ত।

শিং: শিং মাছ চাষের জন্য একটি লাভজনক প্রজাতি। শিং মাছ বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয় এবং চাহিদা ও বেশি। শিং মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানির পিএইচ এবং অক্সিজেন এর মাত্রা ভালো রাখতে হবে। শিং মাছ চাষের জন্য মাগুর ও শিং মাছ সবচেয়ে উপযুক্ত। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন

তেলাপিয়া মাছ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় মাছ, যা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এই মাছ চাষ করে কৃষকরা ভালো উপার্জন করতে পারেন, কারণ এর বাজারে চাহিদা ও মূল্য উচ্চ। তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য নিম্নলিখিত কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।পুকুর প্রস্তুতি পুকুর প্রস্তুতির আগে পুকুরের পাড়, তলা ও জলের গুণাগুণ যাচাই করতে হবে।

পুকুরের পাড় মজবুত ও গাছ-পালা মুক্ত হতে হবে। পুকুরের তলা থেকে অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণী সরিয়ে দিতে হবে। পুকুরের জল পরিষ্কার ও প্রকৃতি সঙ্গী হতে হবে। পুকুরের জলের পিএইচ স্তর ৬.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে হতে হবে। পুকুরের জলের গভীরতা ১ থেকে ১.৫ মিটার হতে হবে। পুকুরের জল শুকিয়ে যেতে দেখলে প্রতি ডেসিমেলে ১ কেজি চুন দিতে হবে।

 চুন দেওয়ার ৭ দিন পর পুকুরে নতুন জল ভরতে হবে। জল ভরার পর প্রতি ডেসিমেলে ৬ কেজি গোবর ও ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে হবে। সার দেওয়ার ২-৩ দিন পর পুকুরের জল হাল্কা সবুজাভ-বাদামী রঙের হলে মাছ ছাড়তে হবে।

মাছ ছাড়ার পদ্ধতি: তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য মনোসেক্স তেলাপিয়া পোনা ব্যবহার করা উচিত। মনোসেক্স তেলাপিয়া পোনা হলো শুধুমাত্র নর মাছের পোনা, যা বৃদ্ধি ও ফলনে ভালো। পোনা ছাড়ার আগে পোনার ওজন, স্বাস্থ্য ও সংখ্যা যাচাই করতে হবে। পোনা ছাড়ার সময় পোনার ওজন ২০-২৫ গ্রাম হতে হবে।

পোনা ছাড়ার হার পুকুরের আয়তন, জলের গুণাগুণ ও চাষের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ঠিক করতে হবে। সাধারণত, প্রতি ডেসিমেলে ১৫০-২০০ টি পোনা ছাড়া যায়। পোনা ছাড়ার পর পোনার সাথে অন্য কোনো মাছ ছাড়া যাবে না।

খাদ্য: তেলাপিয়া মাছ চাষের সময় মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার ১ দিন পর থেকে প্রতিদিন মাছের ওজনের ৫-৭% খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ ২৫-৩০% হতে হবে। খাদ্য হিসেবে মাছের চারা, কেক, ভুষি, ময়দা, তিল, সরিষা, সয়াবিন, মুস্তার্দ কেক, মুরগির খামারের খাদ্য, মাছের খামারের খাদ্য ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

 খাদ্য দেওয়ার সময় খাদ্য পুকুরের একটি কোণে দিতে হবে। খাদ্য দেওয়ার পর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে যদি মাছ খাদ্য শেষ করে না ফেলে, তবে খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। খাদ্য দেওয়ার পর পুকুরের জলের অক্সিজেন স্তর নিয়মিত যাচাই করতে হবে।

পরিচর্যা: তেলাপিয়া মাছ চাষের সময় পুকুরের জলের গুণাগুণ, পাড়, তলা, পোনা, খাদ্য, রোগ ও প্রতিরোধ ইত্যাদি নিয়ে যত্ন নিতে হবে। পুকুরের জলের পিএইচ স্তর, অক্সিজেন স্তর, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, আমোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফাইড, ক্লোরাইন ইত্যাদি নিয়মিত পরিমাপ করতে হবে। পুকুরের জলের পিএইচ স্তর ৬.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে।

পুকুরের জলের অক্সিজেন স্তর ৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার থেকে কম হলে মাছ বেচে থাকতে পারে না। পুকুরের জলের নাইট্রেট, নাইট্রাইট, আমোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফাইড, ক্লোরাইন ইত্যাদি যে কোনো একটির স্তর বেশি হলে মাছের রোগ হয়ে যেতে পারে। পুকুরের জলের গুণাগুণ উপযুক্ত রাখতে হলে পুকুরের জল নিয়মিত বদল করতে হবে।

পুকুরের জল বদলের সময় পুকুরের জলের ২০-৩০% বদল করতে হবে। পুকুরের পাড় ও তলা থেকে অবাঞ্ছিত মাছ, প্রাণী, পানি পোকা, শাপলা, পানি মারজাদা, পানি লালসাক, পানি কালসাক, পানি কাঁচা ইত্যাদি সরিয়ে দিতে হবে। পুকুরের পোনা নিয়মিত যাচাই করে মাছের ওজন, স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি, ফলন ও রোগ পরীক্ষা করতে হবে। পুকুরের খাদ্য নিয়মিত পরিমাপ করে মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য দিতে হবে। পুকুরের মাছ যদি কোনো রোগ আক্রান্ত হয়, তবে তা সঠিক ভাবে চিকিৎসা করতে হবে।

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

আজকেরে আর্টিকেলে আমরা শুরু থেকেই আলোচনা করে আসছি। প্রথমে আমরা আলোচনা করেছি মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্থল ব্যাখ্যা নিয়ে। এরপরে আলোচনা করেছি মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি, এখন আমরা আলোচনা করব পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে।পাঙ্গাস মাছ পুকুরে চাষের জন্য খুবই উপযোগী। 

যে সব জলাশয় বা পুকুরে ৫-৬ মাস পানি থাকে সেখানে এ মাছ সহজেই চাষ করা যায়।পাঙ্গাস মাছের দুই জাত জনপ্রিয়: দেশী পাঙ্গাস ও থাই পাঙ্গাস। দেশী পাঙ্গাস সুস্বাদু এবং বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। থাই পাঙ্গাস দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোচ্চ ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।পাঙ্গাস মাছের একক বা নিবিড় চাষাবাদ করতে হলে পুকুরের তলা সমতল করে নিতে হবে।

 পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত রাখা দরকার। পুকুরের কাছে নলকূপের ব্যবস্থা রাখা দরকার। পুকুরে প্রতি হেক্টরে ৮ থেকে ১০ সেমি. আকারের ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।পাঙ্গাস মাছের চাষে আমিষ সমৃদ্ধ কৃত্রিম খাবার প্রয়োগ করতে হয়। খাবারের পরিমাণ মাছের ওজনের ৫-৮% হতে পারে।

 খাবার দুই বা তিন পর্যায়ে দেওয়া উচিত।পাঙ্গাস মাছের চাষে পানির অক্সিজেন সমস্যা হতে পারে। তাই পুকুরে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। পানির পিএইচ মান ৬.৫-৮.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে। পানির অক্সিজেন মান ৪ মিলিগ্রাম/লিটার এর নিচে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।পাঙ্গাস মাছের চাষে মাছের ওজন নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

মাছের ওজন বৃদ্ধির হার প্রতি মাসে ১০০-১৫০ গ্রাম হতে পারে। মাছের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম হলে বাজারে বিক্রি করা যায়।

শেষ কথা: প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা ইতিমধ্যেই অনেক বিষয়ে জানতে পেরেছেন বিষয়গুলো হল। মাছ চাষের জন্য পানির বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা। মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি। কোন মাছ চাষে লাভ বেশি। তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন। পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আজকের এই আর্টিকেলে।

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লেগেছে মাছ চাষ সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার কাজে লেগে থাকে বা ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার আত্মীয় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মেনি মেমোরি; রি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url